কলা সাধারণত হলুদ হয়ে থাকে কিন্তু কখনও লাল কলা দেখেছি কি? এই কলার দেখাও খুব একটা মেলে না। পুষ্টিবিজ্ঞানীদের মতে, শরীরে রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা বাড়ানো, এনার্জি লেভেল বাড়ানো, হজম শক্তি বাড়ানো থেকে শুরু করে দৃষ্টিশক্তি ভাল করার মতো কাজে ভালো ফল দেয় লাল কলা।
রঙের কারণে অগ্নিসাগর রেড ব্যানানা বা লাল কলা নামেও পরিচিত। এর খোসার রং হলুদাভ কমলা, গাঢ় কমলা, লাল ও লালচে বেগুনি হয়ে থাকে। ভেতরটা প্রচলিত জাতের কলার মতোই হালকা ঘিয়ে রঙের। তবে কখনো কখনো গোলাপি আভাও থাকে। এই কলা গাছের পাতাতেও থাকে লালচে রঙের আভা।
লাল রঙের কলার স্বাদ একটু অন্যরকম। এর মধ্যে কিছুটা আমের মত স্বাদ পাওয়া যায়। অনেকের মতে, এই ধরণের কলা খেতে সাধারণ কলা এবং লাল রাস্পবেরির কোনো মিশ্রণ মনে হয়। তবে ঘ্রাণ অনেকটা স্ট্রবেরির মত। অন্য সব কলার মধ্যে একেবারেই আলাদা করে চেনা যায় অগ্নিসাগরকে। বাহারি এই কলা আগুন রঙে বর্ণিল।
অঞ্চলভেদে কলার পরিকল্পিত বাণিজ্যিক আবাদ রয়েছে। তবে অগ্নিসাগর কলার বাণিজ্যিক আবাদ তেমন একটা চোখে পড়ে না। অথচ দৃষ্টিনন্দন এই কলা দেখলেই হাত বাড়াতে ইচ্ছা জাগে। জাগ্রত হয় রসনা।
অগ্নিসাগর কলা এশিয়া ও দক্ষিণ আমেরিকার অনেক দেশে জন্মে। রঙের কারণে অগ্নিসাগর রেড ব্যানানা বা লাল কলা নামেও পরিচিত। এর খোসার রং হলুদাভ কমলা, গাঢ় কমলা, লাল ও লালচে বেগুনি হয়ে থাকে। ভেতরটা প্রচলিত জাতের কলার মতোই হালকা ঘিয়ে রঙের। তবে কখনো কখনো গোলাপি আভাও থাকে। এই জাতের কলায় ক্যারোটিন ও ভিটামিন সি-এর পরিমাণ বেশি থাকে। সে সুবাদে নানা রোগের বনাজি ওষুধ তৈরিতেও এর ব্যবহার আছে। নানা গুণের কারণে এর চাহিদাও অন্যান্য কলার চেয়ে বেশি।
চাষ পদ্ধতি:
উপযুক্ত জমি ও মাটি- যে কোন চারা রোপণের পূর্বেই সঠিক জায়গা ও মাটি নির্বাচন করা উচিত। যেখানে সরাসরি সূর্যের আলো পড়ে, বন্যামুক্ত উঁচু জায়গা নির্বাচন করে জায়গাটি ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিতে হবে। সঠিক মাটি নির্বাচনের জন্য উপরের বিশেষ বৈশিষ্ট্য থেকে এ বিষয়ে ধারনা নেয়া যেতে পারে।
পানি- অতিরিক্ত পানি দেয়া এবং অতি কম দেয়া উভয়ই গাছের জন্য ক্ষতিকর। অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, বেশি পানি দেয়ার ফলে বিভিন্ন রোগে গাছ আক্রান্ত হয়, এমনকি মারা যায়। এ জন্য গাছের গোড়া শুকালেই কেবল পানি দেয়া যাবে, গোড়া ভেজা থাকলে কোনো মতেই তাতে পানি দেয়া যাবে না। কিছু গাছ বেশি পানি গ্রহণ করে আবার অনেক গাছে পানি কম লাগে। বৃষ্টি বা নালায় জমে থাকা পানি গাছ বেশি পছন্দ করে। তবে সকাল বেলা গাছে পানি সেচ দেয়া উত্তম।
পোকা-মাকড় দমন- প্রাথমিক অবস্থায় শুরুতে সীমিত সংখ্যক পোকা বা তার ডিমের গুচ্ছ দেখা যায়। নিয়মিত রোপণ করা গাছগুলো পরীক্ষা করে দেখা মাত্র পোকা বা পোকার ডিমগুলো সংগ্রহ করে মেরে ফেলা ভালো। পাতার নিচে ভাগে পোকামাকড় অবস্থান করে। অনেক ক্ষেত্রে বয়স্ক পাতায় পোকামাকড় বেশি দিন আশ্রয় নেয়। এ জন্য পাতা হলুদ হওয়া মাত্র পাতার বোটা রেখে তা ছেঁটে দিতে হয়। পোকা-মাকড়ের উপদ্রব বেশি হলে অভিজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী জৈব পদ্ধতি অবলম্বনে গাছকে পোকার হাত থেকে নিরাপদ রাখা যেতে পারে। কীটনাশক ব্যবহার কালে খেয়াল রাখতে হবে যেন তার টকসিসিটি কম সময় থাকে।
আগাছাব্যবস্থাপনা ও অঙ্গ ছাঁটাইকরণ- কাংখিত গাছকে সুষ্টুমত বাড়তে দেয়ার জন্য ক্ষত ও রোগাক্রান্ত ডাল কেটে বাদ দেবা প্রয়োজন। ধারালো সিকেচার বা বিশেষ এক প্রকার ছুরি দিয়ে অঙ্গ ছাঁটাই করতে হয়। ডাল কাটার সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন থেঁৎলে না যায়। এতে গাছে ছত্রাক রোগের আক্রমণ হতে পারে। গাছের নিচে ক্ষতিকর আগাছার কারনে গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধি যাতে ব্যাহত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
সার প্রয়োগ- গাছের সঠিক বৃদ্ধি ও কাঙ্খিত ফলাফল এর জন্য গাছের বৃদ্ধি ও ফুল ধরার সময় সঠিক মাত্রায় জৈব সার ব্যবহার করতে হবে। সে ক্ষেত্রে অধিকাংশ গাছের ক্ষেত্রেই ১৫ দিন বা এক মাস অন্তর অন্তর সার প্রয়োগ করতে হবে। রাসায়নিক সার ব্যবহারের ক্ষেত্রে অভিজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী সঠিক মাত্রায় ব্যবহার করতে হবে।
উপকূলীয় পিরোজপুর ও বরগুনা অঞ্চলে কান্দি ও বেড় পদ্ধতিতে নানা জাতের কলার আবাদ হয়ে থাকে। এর মধ্যে পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া, কাউখালী, জিয়ানগর ও ভাণ্ডারিয়া এবং বরগুনার আমতলী, বামনা ও বেতাগীতে কলা চাষের বাণিজ্যিক প্রসারতা আছে। এসব অঞ্চলে সব ধরনের কলার চাষ হয়ে থাকে। ব্যতিক্রম কেবল অগ্নিসাগর। ফলে এই কলা সহজলভ্য নয়।
দাম ও চাহিদা বেশি থাকায় এখন অগ্নিসাগর কলার বাণিজ্যিক চাষের দিকে ঝুঁকছে চাষিরা। ইতিমধ্যে কাউখালীতে বাণিজ্যিকভাবে অগ্নিসাগর কলার আবাদ শুরু হয়েছে। আর শুরুতেই এই জনপদের অর্থকরী ফসলের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে এটি।
স্থানীয় কৃষক ও কাউখালী কৃষি দপ্তর সূত্র জানায়, বছর দশেক আগে কাউখালী উপজেলায় হাতে গোনা দু-তিনটি অগ্নিসাগর কলার ক্ষেত চোখে পড়ত। সমপ্রতি স্থানীয় কৃষকরা নিজেদের লোকায়ত কৃষিজ্ঞান ও কৌশল কাজে লাগিয়ে অগ্নিসাগর কলার আবাদ সম্প্রসারণ ঘটিয়েছে। স্থানীয় চাষিদের দেখে বেকার যুবকরাও উদ্বুদ্ধ হচ্ছে অগ্নিসাগর জাতের কলা চাষে। প্রতি একর জমিতে ৮০০ থেকে এক হাজার চারা রোপণ করা যায়। ১১ থেকে ১২ মাসেই রোপণ করা গাছ থেকে কলা পাওয়া যায়। সে সুবাদে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছে কাউখালীর অগ্নিসাগর।
কাউখালীর শিয়ালকাঠি গ্রামের কলাচাষি আবদুল হক জানান, কলা বিক্রির জন্য তাঁদের দূরে কোথাও যেতে হয় না। বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যবসায়ীরা এসে বাগান থেকেই পরিপক্ব কলা কিনে নিয়ে যায়। প্রতি হালি (চারটি) অগ্নিসাগর কলা ৬০ থেকে ৭০ টাকা দরে পাইকারি বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বিক্রেতারা তা ৮০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি করে থাকে। এ কারণে এ কলায় কৃষকের লাভ বেশি।
কাউখালী উপজেলা কৃষি সমপ্রসারণ কর্মকর্তা জানান, এখানকার মাটি কলা চাষের জন্য বেশ উপযোগী। অন্যান্য জাতের কলার পাশাপাশি এ বছর কাউখালীর শিয়ালকাঠি, বিড়ালজুরি, জোলাগাতী ও চিরপাড়ায় অগ্নিসাগর কলার চাষ হয়েছে। লাভের অঙ্ক বেশি ও ফলন ভালো হওয়ায় অগ্নিসাগর জাতের কলা এখানে অর্থকরী কৃষিজ পণ্য হিসেবেও জনপ্রিয়তা পাচ্ছে।
তথ্যসূত্র- ইন্টারনেট।