গ্রামীণ জনপথের একটি ক্রমবর্ধমান সমস্যার নাম এখন রাস্তার ওপর ধান শুকানো ও রাস্তার পাশে খড়ের স্তূপ করে রাখা। ফসল কাটার মৌসুম এলেই যেন এ চিত্র আরও প্রকট হয়ে ওঠে। দিনের পর দিন রাস্তাজুড়ে ধান শুকানো হয় আবার রাস্তার দু’পাশ দখল করে রাখা হয় ভুট্টা বা ধানের খড়। এতে সাধারণ পথচারী, সাইকেলচালক কিংবা মোটরসাইকেল আরোহীদের স্বাভাবিক চলাচল রীতিমতো বিপন্ন হয়ে পড়ছে। বাড়ছে দুর্ঘটনার হার। অথচ এ জনদুর্ভোগের বিষয়ে এখনো পর্যাপ্ত নজর নেই স্থানীয় প্রশাসনের।
ধান শুকানো একটি প্রয়োজনীয় কাজ—তা যেমন সত্য, তেমনই সেটি রাস্তার ওপর করার কোনো যুক্তি নেই। রাস্তাঘাট মানুষের চলাচলের জন্য, কৃষিকাজের জন্য নয়। অনেক গ্রামে দেখা যায়, সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত মেঠোপথ কিংবা পাকা সড়কজুড়ে ধান বিছিয়ে রাখা হয়েছে রোদে শুকানোর জন্য। পথচারি বা যানবাহন গেলে ধান কুড়িয়ে সাময়িক রাস্তা ফাঁকা করা হয়। আবার ফিরে এসে ধান বিছিয়ে দেওয়া হয়। এতে সময় নষ্টের পাশাপাশি গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনার আশঙ্কা বাড়ে। বৃষ্টির দিনে স্লিপ হয়ে গাড়ি উল্টে যাওয়া বা ধানের ওপর পা পড়ে পিছলে পড়ে যাওয়াও খুব সাধারণ ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
<script async src="https://pagead2.googlesyndication.com/pagead/js/adsbygoogle.js?client=ca-pub-5327386488541324"
crossorigin="anonymous"></script>
অন্যদিকে ফসল কাটার পরে ধান বা ভুট্টার খড় যেখানে-সেখানে স্তূপ করে রাখা যেন একটি অলিখিত নিয়মে পরিণত হয়েছে। খড়গুলো রাস্তার পাশে এমনভাবে রাখা হয় যে, অনেক সময় অর্ধেক রাস্তাই অবরুদ্ধ হয়ে যায়। সংকীর্ণ সড়কে তখন একসঙ্গে দুটি যানবাহন চলাচল তো দূরের কথা, পায়ে হাঁটাও দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে। বিশেষ করে রাতের আঁধারে বা কুয়াশাচ্ছন্ন সকালে এসব খড়ের স্তূপ বড় দুর্ঘটনার কারণ হয়ে উঠছে। অনেকেই খড়ের নিচে সাপ বা পোকামাকড় লুকিয়ে থাকার আতঙ্কে থাকেন।
কিছু এলাকায় খড় থেকে আগুন ধরে যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। এসব সমস্যা দিনে দিনে প্রকট হলেও এর সমাধানে কার্যকর কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ে না। রাস্তা কারো ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়—এ কথা বলা হলেও বাস্তবে যেন সেটি মানার প্রয়োজন কেউ অনুভব করছেন না। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই স্থানীয় প্রশাসন ‘সহনশী’ ভূমিকায় থাকে, যা এক অর্থে অবহেলারই নামান্তর।
এ পরিস্থিতির পরিবর্তন দরকার। রাস্তা ব্যবহার নিয়ে একটি সুনির্দিষ্ট নীতিমালা থাকা জরুরি, যেখানে বলা থাকবে—ধান শুকানোর জন্য রাস্তা ব্যবহার নিষিদ্ধ এবং খড় বা কৃষিজ বর্জ্য রাস্তার পাশে স্তূপ করে রাখা যাবে না। একইসঙ্গে স্থানীয় পর্যায়ে বিকল্প ব্যবস্থা যেমন—ধান শুকানোর মাঠ নির্ধারণ, খড় সংরক্ষণের বিশেষ জায়গা অথবা খড় থেকে জৈব সার তৈরির ইউনিট স্থাপন—এসব উদ্যোগকে উৎসাহিত করতে হবে।
জনগণের মধ্যে সচেতনতা তৈরির জন্য স্থানীয় মসজিদ, মাদরাসা, স্কুল কিংবা কৃষি দপ্তর থেকে নিয়মিত প্রচার চালানো উচিত। রাস্তার গুরুত্ব বোঝাতে হবে সবার মাঝে—যাতে কোনো কৃষক মনে না করেন যে, তার খড় বা ধানের প্রয়োজনের চেয়ে মানুষের জীবন কম মূল্যবান।
সবশেষে বলতেই হয়, ধান শুকানো ও খড় রাখা—দুটোই গুরুত্বপূর্ণ কৃষিকাজ কিন্তু সেটি যদি অন্য মানুষের জীবন বিপন্ন করে তোলে, তবে তার যৌক্তিকতা হারিয়ে ফেলে। আমাদের সবাইকে বুঝতে হবে, জনসাধারণের সড়কে ব্যক্তিগত স্বার্থ চাপিয়ে দেওয়া চলতে পারে না। এ অব্যবস্থাপনাকে যদি এখনই নিয়ন্ত্রণ না করা যায়, তাহলে তা ভবিষ্যতে আরও বড় বিপর্যয়ের রূপ নিতে পারে।
সম্পাদক ও প্রকাশক : হাবিব আহমেদ হোচী
নির্বাহী সম্পাদক : আব্দুর রাজ্জাক
-:সম্পাদকীয় কার্যালয়:-
ঢাকা অফিস: ৬৬৬/১, ইব্রাহিমপুর (আশীদাগ), কাফরুল, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট, ঢাকা-১২০৬।
দিনাজপুর অফিস: উপশহর, দিনাজপুর-৫২০০।
ই-মেইল: [email protected]
বার্তা ও বাণিজ্যিক বিভাগ: ০১৬৩০ ৮০৯৮৯৮
© স্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৫