পঞ্চগড়ে কম খরচে লাভ বেশি হওয়ায় মিষ্টি কুমড়া চাষ বাড়ছে। পঞ্চগড়ের চাষীরা একই জমিতে আলুর সাথে চাষ চাষ করছেন মিষ্টি কুমড়া। পঞ্চগড় জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়,পঞ্চগড় জেলায় রবি মৌসুমে মিষ্টি কুমড়ার আবাদ হয়েছে ১৭৩ হেক্টর জমিতে। মিষ্টি কুমড়ার উৎপাদন হয়েছে ৪ হাজার ৯২৪ মেট্রিক টন। সবচেয়ে আবাদ হয়েছে দেবীগঞ্জ উপজেলায়।
ভাউলাপাড়া গ্রামের কৃষক শহিদুল ইসলাম বলেন, আমি এক একর জমিতে মিষ্টি কুমড়া চাষ করেছি। মিষ্টি কুমড়ায় খরচ কম লাভ বেশি। প্রথমে আলাদা জায়গায় মিষ্টি কুমড়ার চারা করতে হয়। আলু লাগানোর পর ৬০ দিনের মাথায় আলুর ফাকা ড্রেনে মিষ্টি কুমড়ার চারা লাগানো হয়। এক বিঘা জমিতে ৩৫০ টি মিষ্টি কুমড়ার গাছ লাগানো যায়। একটি গাছে ৪ থেকে ৫টি কুমড়া ধরে। একটি কুমড়া ৩ থেকে ৭ কেজি বা ১০ কেজি পর্যন্ত হয়। বর্তমানে বাজারে প্রতি কেজি কুমড়া ১০ থেকে ১৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আমি ব্যাংকক এবং অনিক -১ জাতের কুমড়া লাগিয়েছি। বীজ, সার, কীটনাশক মজুরি সব মিলিয়ে এক একরে খরচ হয়েছে প্রায় ১৫ হাজার টাকা । এক একরে মিষ্টি কুমড়ার উৎপাদন হবে প্রায় ১৫ হাজার কেজি। গত বছর এক বিঘা জমিতে মিষ্টি কুমড়া চাষ করে ৬ হাজার কেজি কুমড়া উৎপাদন হয়েছিল।
গত বছর ৬৯০ টাকা মন দরে এক বিঘায় ৫ থেকে ৭ লাখ টাকার কুমড়া বিক্রি করেছিলাম। কিন্তু এবার প্রতি মন কুমড়া বিক্রি হচ্ছে ৩২০ থেকে ৩৫০ টাকা মন দরে। আমি এবার ৩৫০ টাকা মন দরে ৭৫ মন কুমড়া ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি। ক্ষেতে আরও অনেক কুমড়া আছে । আশা করছি দাম বাড়লে এবারও লাভবান হব।
ভাউলা পাড়া গ্রামের কৃষক শরিফুল বলেন, আমি ৫ বিঘা জমিতে অনিক-১, এবং ব্যাংকক জাতের মিষ্টি কুমড়া চাষ করেছি। ৩০০-৩৫০ টাকা মন দরে ২ বারে ১ লক্ষ টাকার মিষ্টি কুমড়া বিক্রি করেছি। কিন্তু এবার চাহিদা ও দাম কম। দাম বাড়লে আমরা কৃষকরা উপকৃত হব।
একই গ্রামের কৃষক হুমায়ুন কবির বলেন, আমি ৫ বিঘা জমিতে অনিক-১ জাতের মিষ্টি কুমড়া চাষ করেছি। প্রতি বিঘায় ফলন হয়েছে ৮০ মন। ৫ বিঘায় প্রায় ৪০০ মন ফলন হবে। ৫ বিঘা জমিতে মিষ্টি কুমরা চাষে খরচ হয়েছে ১ লক্ষ টাকা। কিন্তু এবার ফলন কম, দাম কম, চাহিদাও কম।
একই গ্রামের কুমড়া চাষী জয়নুল বলেন, তিনি ‘২০ বিঘা জমিতে ব্যাংকক জাতের মিষ্টি কুমড়া চাষ করেছেন। প্রতি বিঘা জমিতে সার, কীটনাশক ও মজুরী সব মিলিয়ে খরচ হয়েছে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা। ২০ বিঘায় খরচ হয়েছে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা।তিনি আশা করছেন ২০ বিঘায় ১ হাজার মন ফলন হবে। গতবারের তুলনায় এবার চাহিদা কম। আমি এই কুমড়া ক্ষেত থেকে তুলে বাড়িতে রাখব। দাম বাড়লে বিক্রি করব। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে পাইকাররা এসে ক্ষেত থেকে কুমড়া কিনে নীলফামারী,বগুড়া,ঢাকা,সাতক্ষীরাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে যায়।
কথা হয় ঠাকুরগাঁওয়ের কুমড়া ব্যবসায়ী মকছেদ আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, আমি কৃষকের কাছ থেকে দুই ভাবে কুমড়া কিনি। এক ক্ষেত চুক্তি হিসেবে ও দুই মন হিসেবে। আমি এই কুমড়াগুলো মন হিসেবে কিনেছি। প্রতিমন কুমড়া ৩৩০ টাকা মন দরে কিনেছি। আমি পঞ্চগড়ে কৃষকদের কাছ থেকে কুমড়া কিনে সাতক্ষিরা, কুষ্টিয়া, রাজশাহী, ঝিনাইদহ, মাগুড়ার বিভিন্ন মোকামে এই কুমড়া পাঠাই। এতে কৃষকের খরচ কম হয় এবং কৃষক লাভবান হয়। ১ বিঘাতে কৃষকের খরচ ৫ হাজার টাকা হলে ২৫-৩০ হাজার টাকার কুমড়া বিক্রি করতে পারে।
বাহাদুর পাড়াগ্রামের কৃষক সোহাগ রানা বলেন, আমি আড়াই বিঘা জমিতে অনিক-১ জাতের মিষ্টি কুমড়ার চাষ করেছি। একটি গাছে ৩–৪টি মিষ্টি কুমড়া ধরেছে। একটি কুমড়ার ওজন ১থেকে ৫ কেজি। কিন্তু এবার ফলনও কম, দামও কম। কয়েকজন ফরেয়া ব্যাবসায়ী থাকলেও বড় ব্যবসায়ী নাই।
পঞ্চগড় জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. আনোয়ার সাদেক বলেন,পঞ্চগড় জেলায় রবি মৌসুমে মিষ্টি কুমড়ার আবাদ হয়েছে ১৭৩ হেক্টর জমিতে। মিষ্টি কুমড়ার উৎপাদন হয়েছে ৪ হাজার ৯শ ২৪ মেট্রিক টন। সবচেয়ে বেশি আবাদ হয়েছে দেবীগঞ্জ উপজেলায়।
সম্পাদক ও প্রকাশক : হাবিব আহমেদ হোচী
নির্বাহী সম্পাদক : আব্দুর রাজ্জাক
-:সম্পাদকীয় কার্যালয়:-
ঢাকা অফিস: ৬৬৬/১, ইব্রাহিমপুর (আশীদাগ), কাফরুল, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট, ঢাকা-১২০৬।
দিনাজপুর অফিস: উপশহর, দিনাজপুর-৫২০০।
ই-মেইল: [email protected]
বার্তা ও বাণিজ্যিক বিভাগ: ০১৬৩০ ৮০৯৮৯৮
© স্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৫